চলতি মাসেই দেশের ৬২ জেলার ১৫০টি উপজেলায় চালু হতে যাচ্ছে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি। এর মধ্যে ১৩৫টি উপজেলা অতি উচ্চ বা উচ্চ দারিদ্র্যপ্রবণ, যেখানে একসঙ্গে শিক্ষা ও পুষ্টি সংকটে রয়েছে। বাকি ১৫টি উপজেলা অপেক্ষাকৃত নিম্ন দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত।
সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, সেপ্টেম্বরের শেষ কিংবা অক্টোবরের শুরুতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘মিড ডে মিল’ বা দুপুরের খাবার চালু করা হবে। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। পরিসংখ্যানগত তথ্য হালনাগাদের কারণে কিছুটা বিলম্ব হলেও এখন কার্যক্রম এগোচ্ছে। আশা করছি, সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ আমরা শুরু করতে পারব।
জানা গেছে, স্কুল ফিডিং কর্মসূচির উদ্যোগে ডিম, মৌসুমি ফল, বিস্কুট, দুধসহ পাঁচ ধরনের খাবার থাকবে। আগের মতো কেবল শুকনো বিস্কুট নয়, এবার শিশুদের জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে গরম খাবার। সরকার ইতোমধ্যে প্রণয়ন করেছে ‘ন্যাশনাল স্কুল মিল পলিসি’। এর লক্ষ্য, স্থানীয় কৃষকের কাছ থেকে পণ্য কিনে রান্না করা, যাতে একদিকে শিশুরা পুষ্টিকর খাবার পায়, অন্যদিকে গ্রামীণ অর্থনীতিও চাঙ্গা হয়।
তবে এর বাস্তবায়নে নানা চ্যালেঞ্জও রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, এই কর্মসূচি প্রকল্পভিত্তিক না থেকে সরকারি বাজেটের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। তা হলেই এটি টেকসই হবে। বর্তমানে অনেক বিদ্যালয়ে রান্নাঘর, পানি ও সংরক্ষণাগারের মতো অবকাঠামোগত ঘাটতি আছে। শিক্ষা, কৃষি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তথ্যমতে, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চে করোনা মহামারির কারণে স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে স্কুল ফিডিং কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়। পরে সীমিত আকারে ‘টেক-হোম রেশন’ দেওয়া হলেও তা আগের মতো প্রভাব রাখতে পারেনি। অভিভাবকদের অভিযোগ, খাবার বন্ধ হওয়ার পর অনেক শিশুর স্কুলে যেতে অনীহা তৈরি হয়।
এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, এক টুকরো বিস্কুট অনেক শিশুর জন্য ছিল বিদ্যালয়ে আসার অনুপ্রেরণা, ছিল ভবিষ্যতের স্বপ্ন বোনার হাতিয়ার। কারণ ক্ষুধার্ত শিশুর কাছে বর্ণমালা শুধু অক্ষর নয়, তা পরিণত হয় অদৃশ্য প্রাচীরে। সেই প্রাচীর ভাঙতে হলে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি আবারও জাগ্রত করতে হবে সারাদেশের শিক্ষাঙ্গনে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) গবেষণায় বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে প্রতি ১ ডলার বিনিয়োগে ৯ ডলার পর্যন্ত অর্থনৈতিক ফেরত আসে। সংস্থাটির মতে, স্কুল ফিডিং শুধু ক্ষুধা নয়, দারিদ্র্য ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ।
বাংলাদেশে স্কুল ফিডিং কর্মসূচির সূচনা হয় ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে, সরকার ও ডব্লিউএফপির যৌথ উদ্যোগে। শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন দেওয়া হতো ৭৫ গ্রাম শক্তি ও ভিটামিনসমৃদ্ধ বিস্কুট। এর সুফলও স্পষ্ট ছিল- বিদ্যালয়ে ভর্তি বেড়েছে, ঝরে পড়া কমেছে, শিশুদের মনোযোগ ও শেখার ক্ষমতা বেড়েছে।