.
ঢাকা | বঙ্গাব্দ

কলেজে ‘শিক্ষা কোটায়’ ভর্তিতে অনিয়ম

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Sep 13, 2025 ইং
কলেজে ‘শিক্ষা কোটায়’ ভর্তিতে অনিয়ম ছবির ক্যাপশন: সংগৃহীত
ad728

২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষা কোটায় ভর্তিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে শিক্ষা ক্যাডারদের সন্তানদের জন্য নির্ধারিত কোটা ঘিরে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয়েছে। কোটার অপব্যবহারের কারণে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বঞ্চিত হচ্ছেন, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

ভর্তির নীতিমালা অনুযায়ী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১ শতাংশ কোটা (শিক্ষা কোটা-১) এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর বা সংস্থা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন সরকারি স্কুল-কলেজ ও কার্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য আরও ১ শতাংশ কোটা (শিক্ষা কোটা-২) রাখা হয়েছে। তবে পৃথক কোটা হওয়া সত্ত্বেও অধীন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের অনেকেই শিক্ষা কোটা-১-এ আবেদন করে নির্বাচিতও হয়ে গেছে।

সূত্রের তথ্যানুযায়ী, প্রথম দফায় আবেদনের ফলাফল প্রকাশের পর বিষয়টি নজরে আসে। এরপর আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সতর্ক করে বলা হয়, ভর্তির সময় সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে হবে। কোটার সঠিক প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হলে ভর্তি বাতিল হবে। কিন্তু তিন দফায় অর্থাৎ ভর্তির বাছাইকাজ শেষ, হওয়ার পরেও দেখা যাচ্ছে শিক্ষা কোটা-১ অর্থাৎ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তান কোটার বিপরীতে নির্বাচিত হয়েছে ২ হাজার ৭৭ জন শিক্ষার্থী, যা স্পষ্টই অনিয়ম বলে বোঝা যাচ্ছে। কারণ, সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে মাত্র কয়েকজনের সন্তান এবার এসএসসি পাস করেছে।


অভিভাবকেরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে স্পষ্ট অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। তারা বলছেন, মেধা ও প্রতিযোগিতার জায়গায় কোটা থাকায় প্রকৃত যোগ্য অনেক শিক্ষার্থী বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের কেউ কেউ কাঙ্ক্ষিত কলেজে ভর্তি হতে পারছে না অথচ কোটার কারণে কম নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভালো কলেজে সুযোগ পেয়েছে। এর মধ্যে কোটার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অনিয়মের কারণে এই সমস্যা আরও প্রকট হবে।

আসন্ন ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য তিন দফা বাছাই শেষে ৭সেপ্টেম্বর থেকে কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যা চলবে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ক্লাস শুরু হবে।

ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের তত্ত্বাবধানে এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিগরি সহায়তায় অনলাইনে তিন দফায় ভর্তি বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। কোনো পরীক্ষা ছাড়াই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এই বাছাই কাজ হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ৫ থেকে ১০টি কলেজ বা মাদ্রাসার জন্য পছন্দক্রমে আবেদন করেছে। এরপর মেধা, কোটা (যদি প্রযোজ্য হয়) ও পছন্দের ভিত্তিতে একেকজনের ভর্তি প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করা হয়েছে।

নীতিমালা অনুযায়ী, ৯৩ শতাংশ আসন মেধার ভিত্তিতে পূরণ হয়। বাকি ৭ শতাংশের মধ্যে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য। তবে পুত্র-কন্যা পাওয়া না গেলে মেধাতালিকা থেকে ওই আসনে ভর্তি করার নিয়মের কথা আছে নীতিমালায়। আর ২ শতাংশ শিক্ষা কোটা। এর মধ্যে ১ শতাংশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তান এবং আরেক শতাংশ মন্ত্রণালয়ের অধীন ২৮টি দপ্তর বা সংস্থা এবং মাউশির অধীন সরকারি স্কুল, কলেজ ও অফিসগুলোর শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য। এই ২ শতাংশ আসন মহানগর, বিভাগীয় ও জেলা সদরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে সংরক্ষিত থাকবে। এসব কোটার বাইরে আরও কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজস্ব নীতিতে আসন সংরক্ষণের নিয়ম আছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, তিন দফায় আবেদন করে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে ১০ লাখ ৬৬ হাজার ১৬৩ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় নির্বাচিত হয়েছে ১ হাজার ৫০৬ জন, শিক্ষা কোটা-১-এ ২ হাজার ৭৭জন এবং শিক্ষা কোটা-২-এ ১ হাজার ২৯৪ জন।

ঢাকার একটি সরকারি কলেজের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যে তথ্য দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে শিক্ষা কোটা-১-এ যারা আবেদন করেছে, তাদের অনেকেই আসলে শিক্ষা কোটা-২-এর জন্য উপযুক্ত। এর ফলে শিক্ষা কোটা-১-এর প্রার্থীদের বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা আছে।

বিতর্ক তৈরি হওয়ার পর গত ২৪ আগস্ট আন্তশিক্ষা সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির এক নির্দেশনায় স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও যারা আবেদন করেছে, তাদের পুনরায় আবেদন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে নোটিশের পরেও এ বিষয়ে খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। কারণ, প্রথম দফায় শিক্ষা কোটা-১-এ ২ হাজার ২৬৩ জন শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়েছিল। আর সব দফায় বাছাই শেষেও ২ হাজার ৭৭ জন শিক্ষার্থী এই কোটায় নির্বাচিত হয়েছে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, শিক্ষা কোটা-২-এর জন্য যোগ্য অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষা কোটা-১ এ আবেদন করেছে।

জানতে চাইলে অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, এবার ভর্তির পর বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে বুয়েটকে কারিগরি দিক যাচাই করে তা চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে।


নিউজটি পোস্ট করেছেন : স্টাফ রিপোর্টার

কমেন্ট বক্স