পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগে সরকারের দোসর লিয়াকত আলী লাকির স্ত্রী সরকারি সংগীত কলেজের অধ্যক্ষ কৃষ্টি হেফাজকে এক বছরের জন্য চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষাখাতে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পলাতক সাবেক মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকির সহধর্মিনী কৃষ্টি হেফাজকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারই কলেজের শিক্ষার্থীরা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর এ দাবি জানিয়ে আবেদন করেন তারা।
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর অধ্যক্ষ শিক্ষা ক্যাডারের প্রফেসর কৃষ্টি হেফাজ পিআরএল এ যাবেন। তবে জানা যায়, এর আগেই আরো এক বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে আবেদন করেছেন তিনি। বর্তমানে ফাইলটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে।
বিষয়টি জানাজানি হলে কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এমন একজন দুর্নীতিবাজকে ফের অধ্যক্ষ নিয়োগ দিলে কলেজের ক্ষতি শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন তারা। তাকে যেনো চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ না দেয়া হয় সেজন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, প্রফেসর কৃষ্টি হেফাজ গত আট বছরে সরকারি সংগীত কলেজে অধ্যক্ষ রয়েছেন। এসময় তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অনৈতিক কাজের অভিযোগ রয়েছে। প্রিন্সিপাল কৃষ্টি হেফাজ বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পলাতক সাবেক মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকির সহধর্মিনী।
৫ আগস্ট পরবর্তীতে কোন এক গোপন শক্তি বলে এখনো সরকারি সংগীত কলেজের প্রিন্সিপাল হিসেবে বহাল আছেন। তিনি নিজ স্বার্থে কলেজের কিছু নেশাখোর ছাত্র-ছাত্রীদের টাকার বিনিময়ে নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। তাদের ভয়ে কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুখ বন্ধ । বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কলেজের ভিতরে কিছু ছেলে মেয়ে গাঁজা, মদ থেকে শুরু করে সব রকমের নেশার উল্লাস নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং এদের অর্থের যোগান দেন প্রিন্সিপাল নিজে। যার ফলে এসব ছেলেমেয়েরা তার একটা বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এমন কি শিক্ষকরাও এসব নিয়ে কথা বলতে ভয় পান।
শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, এই প্রিন্সিপালের ভয়ে সব শিক্ষক, অফিসের কর্মচারী সবাই নিরুপায় হয়ে চুপচাপ থাকেন। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা গ্রাম থেকে এসেছি এ কলেজে ভালোভাবে পড়াশোনা করে ভালো মানের একজন শিল্পী হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে। কিন্তু প্রশাসন যদি নিজেই নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রাক্তন ও বর্তমান কিছু ছেলেমেয়েদের অর্থ দিয়ে নেশার দিকে ধাবিত করে তাহলে কিভাবে আমরা ভালো কিছুর প্রত্যাশা করতে পারি। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভেতরে ভেতরে কষ্ট পাচ্ছি। আর ক্ষোভ হচ্ছে। তাই সরকারি সংগীত কলেজের বর্তমান প্রিন্সিপাল প্রফেসর কৃষ্টি হেফাজ এর অপসারণের দাবিতে দুর্বার আন্দোলন করার জন্য আমরা একত্রিত হচ্ছিলাম।
কৃষ্টি হেফাজের কিছু আর্থিক দুর্নীতি ও অনৈতিক অপকর্মের অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা জানান, তিনি পূর্ববর্তী প্রিন্সিপালের রেখে যাওয়া সকল টাকা আত্মসাৎ করেছেন। কলেজ কম্পাউন্ডে বরাদ্দ করা বাসভবনে তিনি নিজে না থেকে লাইব্রেরিয়ান পূর্ববর্তী বড়বাবু মৃত আনোয়ার সাহেবের পরিবারসহ কর্মচারীদের থাকতে দিয়ে ভাড়া ও অন্যান্য সুবিধাদি নিয়ে থাকে। এছাড়াও ভবনের মূল নকশা পরিবর্তন করে রুম রেনোভেট করা হয়েছে।
কলেজের মাঠ পূজায় ভাড়া দিয়ে এবং অনুষ্ঠান করার নামে টাকা নিয়ে নামমাত্র কিছু টাকা খরচ করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। গত আট বছরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে সে সব অনুষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত টাকার সিংহভাগেই তিনি আত্মসাৎ করেছে।
তবে, সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কৃষ্টি হেফাজ। তিনি বলেছেন, দিল আফরোজ নামের কলেজের এক সহকর্মীর উৎসাহে তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের আবেদন করেছেন। শিক্ষা ক্যাডারে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া খুবই কঠিন বলেও মনে করেন তিনি।