নারী কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিতে অভিযুক্ত পটুয়াখালীর আজিজ আহম্মেদ কলেজের অধ্যক্ষ মো. আহসানুল হক ও ব্যবসায় সংগঠন বিষয়ের প্রভাষক মো. এবাদুল হকের এমপিওশিট থেকে নাম কেটে দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক। তবে গভর্নিং বডির সভাপতির প্রশ্রয়ে তারা স্বপদে বহাল রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের অন্যতম সদস্য মো. জসিম উদ্দিন হাওলাদার, মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন ও ভুক্তভোগী নারী নুরুন্নাহারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও মাউশি একাধিকবার তদন্ত টিম গঠন করে তদন্ত সম্পন্ন করেন। মাউশি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয় ও জেলা প্রশাসক কার্যালয় পৃথক তদন্তে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধ নিয়োগ, একাধিক নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত ও বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পায়। পরে নৈতিক স্খলনের দায়ে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ আহসানুল হক, তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের দায়ে সহকর্মী শিলা হালদার ও ব্যবসায় সংগঠন বিষয়ের প্রভাষক মো. এবাদুল হকের ইনডেক্সসহ এমপিওশিট থেকে কর্তন করা হয়। ফলে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে এমপিওশিটে সব শিক্ষক কর্মচারীর বেতনভাতা হলেও মাউশি অবৈধ অধ্যক্ষ, ব্যবসায় সংগঠন বিষয়ের প্রভাষক এবাদুল হক ও শিলা হাওলাদারের ইনডেক্সসহ এমপিও স্থগিত হওয়ায় ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে তাদের বেতনভাতা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ প্রভাষক মো. এবাদুল হকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাউশি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয় একাধিকবার গভর্নিং বডির সভাপতির কাছে চিঠি প্রেরণ করেন। কিন্তু গভর্নিং বডির সভাপতি নাসরীন জাহান অজ্ঞাত কারণে অধ্যক্ষ ও প্রভাষক এবাদুল হকের বিরুদ্ধে কোনোরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।
সূত্র আরও জানায়, আজিজ আহম্মেদ কলেজের অর্থনীতির প্রভাষক মো. আল আমিনের বিরুদ্ধে তার প্রথম স্ত্রী মোসা. নুরুন্নাহার বেগম পারিবারিক আদালতে মামলা করায় একাধিকবার সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাভোগ করেন। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মাউশি বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয় তাকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেন। এরই প্রেক্ষিতে প্রভাষক আল আমিনকে সাবেক গভর্নিং বডির সভাপতি সাময়িক বরখাস্ত করেন। কিন্তু পরবর্তীতে অধ্যক্ষ আহসানুল হক প্রভাষক আল আমিনকে পূর্ণাঙ্গ বেতন প্রদান করেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী মোসা. নুরুন্নাহারের। অথচ এ সময় তাকে অর্ধেক বেতন দেওয়ার নিয়ম।
সূত্র জানায়, নৈতিক স্খলনের দায়ে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ আহসানুল হকের সঙ্গে ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক শিলা হালদারের ৯ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের একটি কল রেকর্ড ভাইরাল হয়েছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা তার অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছিল। ওই ঘটনায় মাউশির শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তপন কুমার স্বাক্ষরিত চিঠি অনুযায়ী অধ্যক্ষ ও ব্যবসায় সংগঠন বিভাগের প্রভাষকের এমপিও স্থগিত করেন। কিন্তু অভিযুক্ত অধ্যক্ষসহ শিলা হালদার ও প্রভাষক মো. এবাদুল হকের এমপিওশিটে স্বাক্ষর করেন। এ নিয়ে কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ স্থানীয় জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ অবস্থায় কলেজটিতে শিক্ষাদানসহ প্রশাসনিক কার্যক্রম দিন দিন মুখ থুবড়ে পড়ছে।
এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডিডি ওমর ফারুক বলেন, আজিজ আহম্মেদ কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তার ইনডেক্স স্থগিত করা হয়েছে মর্মে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি নাসরীন জাহান বলেন, আমি চিঠি পাইনি। চিঠি পেলে কমিটির মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রভাষক আল আমিন সম্পূর্ণ বেতন উত্তোলন করেন কি-না জানতে চাইলে সভাপতি বলেন, আমি জেনে আপনাকে বলবো। আল আমিন তার প্রথম স্ত্রী কর্তৃক পারিবারিক মামলায় একাধিকবার জেল খেটেছে জানি। আল আমিন তার দুই শিশু সন্তানের ভরণপোষণ দিচ্ছে তাও জানি। এদিকে অভিযোগকারী আল আমিনের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম জানান মাউশির নির্দেশ মতে দুই শিশু ছেলের ভরণপোষণ দেওয়ার টাকা দিচ্ছে না বলেও নুরুন্নাহার অভিযোগ করেছেন।